আজ বুধবার ২০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডাক্তার, প্রকৌশলী’সহ সকল সাধারণ শিক্ষার্থী এখন BCS এর মাধ্যমে প্রশাসন বা পুলিশ বিভাগে ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। যার কারণে মুখস্থ বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে সকলে এখন কীভাবে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় তার পেছনে উঠে পড়ে লেগেছে।
সবাই বিসিএস ক্যাডার হবার জন্য উঠে পড়ে লাগার কারণ কী? কী জাদু রয়েছে হঠাৎ করে BCS ক্যাডারে? দুর্নীতি এবং ক্ষমতার জোরে বড় কিছু হওয়া নাকি চাকরির নিশ্চ’য়তা পাওয়া?
এ এমন একটি সেক্টর যা শুধু বাংলা*দেশেই গ্রহণযোগ্য; তা সত্ত্বেও সবাই BCS ক্যাডার হতে উঠেপড়ে লেগেছে। এর কারণে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যে পুরোপুরি ধ্বংস হতে চলেছে, সঙ্গে নতুন প্রজন্ম তাদের সব স্বপ্ন হারাতে শুরু করেছে।
ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তারি ছেড়ে প্রশাসনে যাবার মূল কারণ যেমন সরকারি গাড়ি, বাড়িসহ ক্ষমতা যা ডাক্তার বা ইঞ্জিনি’য়াররা পাচ্ছেন না।
এ কারণে সবাই নিজ নিজ পেশা ছেড়ে আমলা হওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে সু-শিক্ষার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দুর্নীতির। যার কারণে দেশ রসাতলে গিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তাই বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশের পাবলিক লাইব্রেরি*গুলোতে সবাই বসে বসে জ্ঞানচর্চার বদলে সাধারণ জ্ঞান মুখস্থ করছে। কারণ সবাই যেটার মার্কেট ভালো সেটাই বেছে নিচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা প্রকৃত পক্ষে স্মার্ট। কেন অযথা সময় নষ্ট করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষি বা বিজ্ঞান পড়বে? উদ্দেশ্য যখন অর্থ উপার্জন, তাহলে কেন ঝামেলা? শর্টকাট পথে অর্থ উপার্জন করাতে ক্ষতি কী?
যে দেশের শিক্ষায় মোড়াল ভ্যালু নেই, নেই সৃজনশীলতা, কেন সে দেশের শিক্ষার্থীরা আলাদা হবে? আম গাছের তলে তো আমই পড়ার কথা।
তবে অনেকের মন খারাপ এই ভেবে, ছোট বেলায় তার চেয়ে পিছিয়ে থাকা ছেলেটি আজ তার বস হয়ে গেছে। কারণ তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তা।সশস্ত্র বাহিনীতে যেমন উচ্চ-মাধ্যমিক পাস করা ছেলে-মেয়েদের চাকরি এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে অফিসার বানানো হচ্ছে, ঠিক একইভাবে দেশের অর্থে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারও তৈরি করা হচ্ছে।
ঠিক একইভাবে বিসিএস ক্যাডার হলে তাদেরকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে মস্তবড় পুলিশ অফিসার বা আমলা করা হচ্ছে।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি, পুলিশ অফিসার বা আমলা হয়ে সরকারি চাকরি করে সারাজীবন সুন্দর জীবন পাবার পরও মনে বড় কষ্ট সবার। অথচ বাকি যারা কিছুই পেলো না তাদের কী হবে, এটা কি ভাবার সময় আছে কারও?
আমেরিকায় প্রতি দশ বছর পর পর গাড়ির লাই’সেন্সের মতো ডাক্তারকেও নতুন করে পরীক্ষা দেয়া লাগে চাকরিতে বহাল থাকার জন্য। বাংলাদেশেই একবার সরকারি চাকরিতে ঢুকলে বাকি জীবন নিশ্চিত, চমৎকার।
আমরা অনেক কিছুর জন্যই রাজনীতি*বিদদের দায়ী করি। কিন্তু নোংরা রাজনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের যে অনিয়ম, দুর্নীতি বয়ে চলেছে এবং যার কারণে দেশ দিনের পর দিন পিছিয়ে যাচ্ছে সেটা কী ভেবে দেখার সময় কারও আছে?
এই যে ডাক্তাররা আজ পররাষ্ট্র বা সাধারণ ক্যাডারে যাচ্ছেন, কিন্তু কেন?কারণ যে ছেলেটা পুলিশ ক্যাডারে চলে যায় তার কাছে মনে হয় পুলিশই সব। বাকিরা যখন দেখে সদ্য যোগ দেয়া ছেলেটা গাড়ি হাঁকাচ্ছে আর তিনি দশ বছরেও বসার জায়গা পাচ্ছেন না, তখন কিন্তু তার মধ্যে হতাশা বাড়ে।
বর্তমানে দেশে আমলাতন্ত্রে প্রশাসন বা পুলিশের হাতেই সব ক্ষমতা। এই হতাশার কারণে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররাও এখন বিসিএস ক্যাডারে যেতে চায়। কিন্তু তাদের অতিরিক্ত পড়ার চাপের কারণে তারা সাধারণ জ্ঞান অর্জনে পিছে পড়ে আছে।
যার কারণে পুথিঁগত বিদ্যা ছাড়া যারা বিসিএস ক্যাডার হয়ে সমাজের উচ্চ পর্যায়ের কাজগুলো করছে, তাদেরকে সহ্য করতে পারছে না।
আমার প্রশ্ন- যদি সত্যিকার অর্থে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার মেধাবী এবং উন্নত’মানের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে থাকে, তবে তাদের সাধারণ বিসিএস পাশ করতে সমস্যা কোথায় বা ক্রিয়েটিভ ওয়েতে নিজেদেরকে কেন দক্ষ বলে প্রমাণ করতে পারছে না?
অন্যদিকে গতানুগতিক পরীক্ষা পদ্ধতি আর জঘন্য মুখস্থ বিদ্যার বিসিএস আর কোটাতন্ত্র এই আমলা’তন্ত্রের আরও ১২টা বাজিয়েছে। পাশাপাশি সিস্টেমে সমস্যা, অনিয়ম, দুর্নীতি, দলবাজি তো আছেই।
মনে রাখা প্রয়োজন, সমাজে বসবাস করতে হলে দরকার সাধারণ জ্ঞানেরও। তাকে বাদ দিয়ে শুধু পুথিঁগত বিদ্যা অর্জন করলে হবে কী?
আমি বলছি না প্রশাসনে সৎ মেধাবী লোক নেই, অবশ্যই আছে। বহু বছর আগেই ব্রিটিশ দেশ ছেড়েছে অথচ চলছে সেই নিয়ম এখনও।
ব্রিটিশরা কেরানি বানানোর জন্য যে সিস্টেম এখানে চালু করেছিল আজও সেটি বহাল তবিয়তে টিকে আছে।
ফলে দেশে অনেক সরকারি অফিসের নিম্নপদের কেরানিরও লাখ-কোটি টাকা আছে। কারণ ওই কেরানিতন্ত্র
সমাজের কেরানিদের সার্টি’ফিকেট নেই সত্যি কিন্তু তারা অনেক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ল-ইয়ার, আমলাদের থেকে স্মার্ট। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
কেরানিদেরও যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে, তা না হলে তারা সমস্ত জ্ঞানী শিক্ষাবিদদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে যা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।
অতীতে যেমন যুগ যুগ ধরে কৃষকদের অবহেলা করা হয়েছে। কৃষকরা যদি সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে দেশের কৃষি কাজে মনোযোগী হতেন তবে দেশের পরিস্থিতি এতটা সংকটময় হতো না।
শিক্ষিত সমাজ কখনও বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের কাজের মূল্যায়ন করেনি, করে না। এখন সেই শিক্ষিত সমাজ যখন ধরা খেয়েছে যেমন, পুলিশ অফিসার একজন ডাক্তারের চেয়ে ভালো সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে তখন বিষয়টি বুঝতে কিছুটা সহজ হচ্ছে।আমি গত কয়েক বছর ধরে যতটুকু দেখছি দেশের সব সেক্টরেই বহুলাংশে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। একই সঙ্গে লক্ষণীয় যে দেশের তরুণদের একটা বড় অংশই তাদের মেধা-যোগ্যতা শেষ করে ফেলছে একটা সরকারি চাকরির পেছনে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষক সব বাদ দিয়ে দেশের তরুণরা সবাই এখন প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেয়ার স্বপ্ন দেখছে। এর থেকে রেহায় পেতে দেশের শিক্ষা প্রশিক্ষণকে ভেঙ্গে নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষাদান শুরু করতে হবে।
তার জন্য দরকার বিশে’ষায়িত শিক্ষা প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় যা আমি গত দুই বছর আগ থেকেই বলে এবং লিখে আসছি। শুধু রাজনীতি বা আমলাতন্ত্র নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন আনতে হবে।আমি মনে করি জাতির প্রথম যে কাজটি করা উচিত তা হলো হিংসা-বিদ্বেষ হৃদয় থেকে মুছে ফেলা এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বন্ধ করা।
বাংলাদেশে বেশির ভাগ মেধাবী ছেলে-মেয়েরাই সমাজের ছোট কাজগুলো যারা করে তাদেরকে সম্মান করতে শেখেনি। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন সুইডেনে এমনটি কখনও দেখা যাবে না। এখানে যার যা ভালো লাগে সেটাই পড়ে এবং সেই ভাবেই সমাজের দায়ভার নিয়ে থাকে।
পিয়ন বা নিম্ন মানের কর্মচারীদের মান সম্মান কি নেই এবং তাদের কাজগুলোর কি কোনো গুরুত্ব নেই সমাজে? যদি না থাকে, তাহলে পেটে যখন বর্জ্য নিয়ে চলাফেরা করতে সমস্যা নেই, তবে সে বর্জ্য পেট থেকে বের হবার পরপরই কেন একজন সুইপারের প্রয়োজন?
সু-শিক্ষায় দিতে পারে এসব সমস্যার সমাধান। কারণ সচেতন জাতি কখনও অজুহাত খোঁজে না, তারা সমাধান খুঁজে বের করে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে.
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনকে সাহিত্য বলে।” কিন্তু আমরা একের... আরো পড়ুন
★বাংলা: ১। অ্যাসিওরেন্স/ওরাকল বাংলা গাইড ২। লাল নীল দীপাবলি (প্রাচীন ও... আরো পড়ুন
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর সংক্ষিপ্ত রূপ বিসিএস নামে সর্বাধিক পরিচিতি। BCS... আরো পড়ুন
মো. ওমর আলী রাসেল, ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে কর্মরত আছেন।... আরো পড়ুন
ফাতিমা আলম মেঘলা। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ওই ছাত্রী... আরো পড়ুন
আপনার শৈশব-কৈশোর কেমন কেটেছে? রাবেয়া আক্তার সাখী: ছেলেবেলা খুব সুন্দর ও... আরো পড়ুন