বিসিএসের রিয়েল ভাইভার অভিজ্ঞতা জানুন
বিসিএস ভাইভা শেয়ার করি।
৫এপ্রিল, ২০১৭, ড. আব্দুর জব্বার খান স্যারের বোর্ডে ভাইভা দিয়েছিলাম। ১৫ জনের মধ্যে আমিই ছিলাম ১৫তম। শুরুতে রুমে ঢুকেই সালাম দিলাম। স্যার বসতে বললেন। ধন্যবাদ দিয়ে বসলাম। সামনে বোর্ড চেয়ারম্যান, দুইপাশে আরও দুইজন সদস্য। চেয়ারম্যান স্যার আমার নথিপত্র ঘাটাঘাটি করলেন। বললেন, পবন চৌধুরী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসন প্রথম চয়েস।
আমি সম্মতিসূচক ‘জ্বি স্যার’ বললাম। তারপর বামপাশের জনকে নির্দেশ দিলেন আমাকে প্রশ্ন করার জন্য। চশমাপরা দেখতে ছোটখাটো মানুষটি শুরুতেই বললেন, “প্রশাসন প্রথম চয়েস। কিন্তু, আমি প্রশ্ন করবো পুলিশ থেকে।আপনি প্রস্তুত?
আমি মৃদু হেসে বললাম, জ্বি, স্যার।
স্যার ১:- পুলিশ এর ৪টা ইউনিট এর নাম বলেন।
আমি:- DB, SWAT, RAB, CID।
স্যার১:- ডিবি কি?
আমি:- এটি পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট। অত্যন্ত দক্ষ, বাস্তবধর্মী ও প্রযুক্তি নির্ভর শাখা। প্রতিটা মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট হিসেবে ডিবি কাজ করে।
স্যার১:- SWAT কী?
আমি:- Special Weapons & Tectics.
স্যার ১ :- এর কাজ কি?
আমি:- জরুরী প্রয়োজন এবং সংকট ব্যবস্থাপনা, সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ, জিম্মি উদ্ধার ইত্যাদি অপরাধ মোকাবেলায় সোয়াত সদস্য মোতায়েন করা হয়।
স্যার১:- আপনার হোম ডিস্ট্রিক্ট চিটাগাং?
আমি:- জ্বি, স্যার।
স্যার১:- বর্তমানে ওখানকার আলোচিত ঘটনা কি?
আমি:- রিসেন্টলি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। বর্তমানে অভিযান চলছে।
স্যার১ :- অভিযানটির নাম কি?
আমি:- অপারেশন এ্যাসল্ট সিক্সটিন।
এরপর তিনি অন্য ডানপাশের স্যারের দিকে তাকালেন। স্যার আমার দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করা শুরু করলেন।
কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পদক্রম বলেন?
আমি:- সহ: সচিব< সিনিয়র সহঃ সচিব <উপসচিব< যুগ্ন সঃ < অতিরিক্ত সঃ < সচিব < সিনিয়র সচিব।
স্যার২ :- প্রশাসন এর সর্বোচ্চ পদ কি?
আমি :- মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
স্যার ২ :- বর্তমানে এই পদে কে আছেন?
আমি:- মোহাম্মদ শফিউল আলম।
স্যার ২ :- প্রশাসনে ক্যাডার হলে আপনি কোন প্রশাসনে জয়েন করবেন?
আমি:- মাঠপ্রশাসনে।
স্যার২ :- মাঠপ্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ কি?
আমি:- বিভাগীয় কমিশনার
স্যার২:- আপনি কোন পদে জয়েন করবেন?
আমি:- সহকারী কমিশনার।
স্যার২ :- নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলতে কি বুঝেন?
আমি:- একজন প্রশাসন ক্যাডার যতদিন মাঠপ্রশাসনে পদায়ন থাকেন, ততদিন তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর তিনি চেয়ারম্যান স্যারের প্রতি দৃষ্টি স্থাপন করলেন। স্যার কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, ” আমরা তো বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দেখা যায় তাঁরা সেইসময়কার সরকারের কাছ থেকে বেতন ভাতার সুযোগ সুবিধা নেন। এতে কি তাঁদের দ্বৈত চরিত্র পরিলক্ষিত হয়না?
আমি:- না স্যার। তারা তৎকালীন সরকারের সুযোগ সুবিধা নেন, এই মতবাদ অনেকেই প্রতিষ্টা করতে চান।কিন্তু, তা ভিত্তিহীন। ২৬মার্চ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক যেই রাষ্ট্রের জন্ম হয়, তাঁরা সেই রাষ্ট্রের আনুগত্য প্রকাশ করেন।
স্যার :- বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৬ ডিসেম্বরে, তাহলে?
আমি:- ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ আমরা স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয় লাভ করি। কিন্তু, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয় ২৬ মার্চের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে। তৎকালীন বুদ্ধিজীবীরা সেই দেশের পক্ষে কাজ করেন।
স্যার:- সেই দেশের পক্ষে কিভাবে কাজ করবেন, এদের তো কোন সরকার ছিলোনা!!
আমি:- ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ মুজিবনগর সরকার গঠন হয় এবং ১৭ এপ্রিল সেই সরকার শপথও গ্রহণ করেন। সরকার অবশ্যই ছিলো।
স্যার:- মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
আমি:- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্যার:- জাতির পিতা কেন বললেন?
আমি:- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানে তাঁকে জাতির পিতা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
স্যার :- অনুচ্ছেদ টা কত?
আমি:- ৪(ক)
স্যার :- আচ্ছা, আপনি তো বললেন বাংলাদেশের জন্ম হয় ২৬ মার্চ, আবার সরকার গঠন হয়েছে ১০ এপ্রিল। তাহলে এই ১৪-১৫ দিন কি সরকার ছাড়া ছিল?
আমি:- আমরা যে ৭০ এর নির্বাচনে জিতলাম!!
এরপর স্যার সম্মতি দিয়ে মাথা নেড়ে বললেন, “That’s the right point”
এরপর আমাকে কাগজপত্র নিয়ে চলে আসতে বললেন। আমি সালাম দিয়ে পিছনে না ফিরে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ স্যার আমার পিছনে নির্দেশ করে প্রশ্ন করলেন, ” ওখানে কি হচ্ছে?”
আমি অবাক হয়ে পিছনে ফিরে দেখি, দেওয়ালে বিশাল এক টিভি চলছে। সাউন্ড মিউট করে দেওয়া। টিভিতে বিবিসি নিউজ চলছে। এক প্রমিলা রিপোর্টার সরেজমিনে প্রতিবেদন করছেন। বললাম, ” ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে যে হামলা হল, তার উপর প্রতিবেদন হচ্ছে।”
স্যার বললেন, স্ক্রলে যা ভাসছে তা ট্রান্সলেট করেন।
আমি বিনয়ের সংগে তা করলাম। ঘটনাটা বুধবারে ঘটেছে। আমার ভাইভাও বুধবারে ছিলো। আমি অবাক হয়ে বললাম, এটা আজ হয়েছে!!!
স্যার, এই প্রথম আমার চোখাচোখি হলেন। মিষ্টি হেসে বললেন, এটা গত সপ্তাহের রিপোর্ট।
আমি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে উত্তর দিলাম, আমি জানতাম না স্যার।
স্যার এবার শব্দ করে হেসে আমাকে আসতে বললেন। আমার সেদিন স্যারের সেই হাসিটিকে মনে হলো, পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র হাসি। আমি হাসিমুখে বের হয়ে এলাম।
৩৬তম বিসিএস ছিলো আমার জীবনের শেষ বিসিএস আর ভাইভাটা ছিলো আমার শেষ চাকুরী পরীক্ষা। এর আগে ৩৪তম, ৩৫তম বিসিএস এ নন ক্যাডারের তকমা গায়ে লেগেছে। তারপরও হতাশ না হয়ে শেষ বিসিএস টা দিয়েছি। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পরীক্ষাটা শেষ করেছি। ফলশ্রুতিতে; ইনফরমেশন ক্যাডারে তৃতীয় হয়ে ৩৬তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।