আজ বৃহস্পতিবার ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সফল হওয়ার সহজ বুদ্ধি আজ আমি তোমাদের শিখিয়ে দেব। সফল হতে কে না চায়! তুমিও চাও, আমিও চাই। আর সফল হওয়াটা খুব সোজাও। কঠিন কিছু নয়। কেমন করে সফল হবে, তা–ই জানা যাবে এই লেখায়!
এই পর্যন্ত পড়ে নিশ্চয়ই তুমি হেসে উঠছ! আরে লেখক সাহেব, আপনি তো নিজে ব্যর্থ। আপনি কেমন করে অন্যকে পরামর্শ দেবেন সফল হওয়ার জন্য!
আমি জানি যে আমি ব্যর্থ। সে জন্যই তো আমি তোমাদের বলতে পারব, কী কী না করলে তোমরাও সফল হতে পারবে। এই ব্যাপারে আমি আমার জীবনের একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। আমি তখন পড়ি বুয়েটে, থার্ড ইয়ারে। মানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে। আমি বুয়েটে ফার্স্ট ইয়ারেই ঘোষণা দিয়ে দিই, আমি আসলে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই না, আমি লেখক হতে চাই। কাজেই পড়াশোনায় আমার তেমন মন ছিল না। যা–ই হোক, থার্ড ইয়ারের পরীক্ষার সময় কী পড়তে হবে, না হবে, তা বোঝার জন্য আমি যেতাম আমাদের ক্লাসের ফার্স্টবয়ের কাছে। তার নোটগুলো আমি সংগ্রহ করতাম। তার কাছে আমি পড়া বুঝে নিতাম। সে আমাকে একটা সাবজেক্টের কোনো অঙ্ক শেখাল না, শুধু থিওরি পড়াল। মানে তত্ত্ব। জিনিসটা কী, কেন হচ্ছে। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পেয়ে দেখি একটাও থিওরি আসেনি, এসেছে সব অঙ্ক। কাজেই আমি ওই সাবজেক্টে ফেল করলাম। বুয়েটে নিয়ম ছিল, একটা সাবজেক্টে ফেল করলে সপ্তাহ কয়েক পড়ে আবার পরীক্ষা দেওয়া যায়। তখন আমার যে বন্ধুরা বছরের পর বছর ফেল করত, তারা আমাকে ডাকল। তারা বলল, তুমি কেন ফার্স্টবয়ের কাছে গেছ পরামর্শ নিতে? সে জন্যই তো ফেল করেছ। তুমি যদি আমাদের মতো ফেল-করাদের কাছে আসতে, আমাদের বুদ্ধি শুনতে, তাহলে তুমি শুধু পাসই করতে না, রীতিমতো ভালো নম্বর পেতে। কারণ আমরা বছরের পর বছর ধরে ফেল করছি, আমরা জানি, কোন পরীক্ষার কী ধরনের প্রশ্ন হয়। তুমি আমাদের কাছে পড়ো।
আমি তাদের কথা শুনলাম। তারা বলে দিল, এবারের প্রশ্ন কেমন হবে। অঙ্ক আসবে নাকি থিওরি আসবে। কোনটা কোনটা ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। আমি তাদের কথা শুনলাম এবং পরের পরীক্ষায় আরামেই পাস করে গেলাম।
কাজেই পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে ব্যর্থ লোকেরা সফল লোকদের চেয়ে বেশি সফল বলেই আমি মনে করি। সেই কারণেই সাহস করে আমি তোমাদের পরামর্শ দিতে চাই, জীবনে সফল হতে গেলে কী করতে হবে।
তোমরা যারা শিশু, কিশোর, তরুণ, তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, বড় স্বপ্ন দেখবে। কিন্তু জীবনের লক্ষ্য ছোটবেলাতেই স্থির করে ফেলো না। কথাটার মানে আমি একটু বুঝিয়ে বলতে চাই।
স্বপ্ন কী? এই ব্যাপারে আমার সাকিব আল হাসানের কথা পছন্দ হয়েছে। হ্যাঁ, বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কথাই বলছি। কিশোর আলোর পাঁচ নম্বর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসান এসেছিলেন কিআনন্দ অনুষ্ঠান ২০১৮ করতে। সেই অনুষ্ঠানে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্বপ্ন কী? সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, যা শুনলে লোকে চমকে উঠবে, লোকে বলবে, না, এটা সম্ভব নয়—তা হলো স্বপ্ন। যা হওয়া সম্ভব, যা ঘটানো সম্ভব, সেটা তো বাস্তব। বাস্তব জিনিসকে আমরা কেন স্বপ্ন বলব? স্বপ্নের কথা শুনে লোকে যদি পাগলই না বলল, সেটা কখনোই স্বপ্ন নয়। তাই তো! আমি বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হব, ডাক্তার হব, বিজ্ঞানী হব—এগুলো তো সবই পূরণ করা সম্ভব। তাহলে এগুলো স্বপ্ন হলো কী করে? যদি কেউ বলে, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি পাখি হয়ে গেছি; কেউ যদি স্বপ্ন দেখে আমি মঙ্গলগ্রহে বসে আইসক্রিম খাচ্ছি বা আমি টাইমমেশিনে চড়ে আইনস্টাইনের সঙ্গে গল্প করছি—এগুলো হলো স্বপ্ন।
হ্যাঁ, আগে লোকে যেটাকে বলত অসম্ভব, পরে সেটা সম্ভব হয়েছে, সেই রকম স্বপ্ন তো পৃথিবীতে বহু মানুষ দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন তাঁরা পূরণও করেছেন। যেমন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র (১৯২৯-১৯৬৮) আমেরিকায় কালো মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছিলেন। আগে আমেরিকায় কালো মানুষদের কোনো অধিকার ছিল না। ভোটের অধিকার তো দূরের কথা, সাদা মানুষদের সঙ্গে একই বাসে-ট্রেনে তারা অনেক সময় উঠতে পারত না, একই রেস্তোরাঁয় ঢুকতে পারত না, একই স্কুলে পড়তে পারত না। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটনে একটা সমাবেশে ঘোষণা করলেন, আমার একটা স্বপ্ন আছে।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলতে লাগলেন, যদিও আমরা বর্তমানে আর ভবিষ্যতে অনেক বাধাবিপত্তির মধ্যে থাকব, তবুও আমি বলব, আমার একটা স্বপ্ন আছে, যেটা আমেরিকান স্বপ্নেরই অংশ। আর তা হলো এই জাতি জেগে উঠবে, আর এই জাতির সত্যিকারের বিশ্বাসকে বাস্তবে পরিণত করবে যে প্রত্যেকটা মানুষ সমান হিসেবেই জন্মগ্রহণ করে।
তিনি বলতে লাগলেন তাঁর স্বপ্নের কথা, একদিন ক্রীতদাসেরা আর তাদের ছেলেরা এবং ক্রীতদাসের মালিকেরা আর তাদের ছেলেরা ভাই ভাই হিসেবে একই টেবিলে বসতে পারবে। স্বাধীনতা আর ন্যায়বিচারের সমান ভূমিতে মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে।
তার সেই কথা সেদিন স্বপ্ন মনে হয়েছিল। কিন্তু আজ তা অনেকটাই বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তবে ওই সংগ্রাম চলছে।
কিংবা আমরা বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। তিনি যখন স্বাধীন বাংলাদেশের কথা ভাবতেন, তখন কেউই তা কল্পনা করতে পারত না। কিন্তু তিনি জানতেন যে, এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে, আর তা করার জন্য তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন। সারাটা জীবন তিনি সংগ্রাম করলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিলেন। পাকিস্তানের দুই অংশ পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তান মিলেই তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেন। সারা বাংলাদেশ স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হলো। তিনি বললেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” সেই সময় আমেরিকানরা বলতে লাগল, আচ্ছা, বাংলাদেশ যে স্বাধীন হতে চায়, স্বাধীন হয়ে ওরা কী করবে? ওরা তো খুব গরিব। ওদের তো কোনো সম্পদ নেই। ওই দেশ তো অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবে না। ইংরেজিতে ওরা রিপোর্ট লিখেছিল, ভায়াবল হবে না। কেন ওরা স্বাধীন হতে চাইছে?
কিন্তু বাংলাদেশ কেবল স্বাধীন হয়নি, অর্থনৈতিক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে ভালো করছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ভারতের মানুষের চেয়েও ভালো। আমরা দ্রুত একটা বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবেও গড়ে উঠতে যাচ্ছি। আমেরিকান পণ্ডিতদের আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এর পেছনে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন।
কাজেই তোমাদের বলব, স্বপ্ন দেখো। বড় বড় স্বপ্ন। নিজের জীবন নিয়েও বড় স্বপ্ন দেখো। চারপাশের মানুষদের নিয়েও বড় স্বপ্ন দেখো। এগুলো যে বাস্তবায়িত হতেই হবে, তার নিশ্চয়তার কোনো দরকার নেই। কারণ তুমি স্বপ্ন দেখছ, বাস্তবের কথা বলছ না।
কিন্তু ছোটবেলাতেই পণ করার দরকার নেই যে, ডাক্তার আমাকে হতেই হবে। ইঞ্জিনিয়ার আমাকে হতেই হবে। ব্যারিস্টার আমাকে হতেই হবে। ছোটবেলায় তুমি বলতেই পারো, আমি বড় হয়ে পাইলট হব। অ্যাস্ট্রোনট হব। কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হব। বলতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু সেটা যেন ধনুর্ভাঙা পণ না হয়।
আমরা এইবার আবারও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের গল্পটা বলব। এ পি জে আবদুল কালাম হতে চেয়েছিলেন বিমানবাহিনীর পাইলট। সে জন্য তিনি দেরাদুনে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আটজনকে নেওয়া হবে। এ পি জে আবদুল কালাম পরীক্ষায় হলেন নবম। খুব মন খারাপ করে তিনি একটা নদীর ধারে বসে আছেন। এই সময় একজন সাধু এলেন তাঁর কাছে। বললেন, খোকা, তুমি কেন একা একা নদীর ধারে বসে আছ? কেন তোমার মন খারাপ?
এ পি জে আবদুল কালাম বললেন, আমার জীবনের আর কোনো মানে নেই। আমি পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছি। এই জীবন নিয়ে আমি এখন কী করব?
সাধু বললেন, তুমি পরীক্ষায় ফেল করেছ। এর একটা মানে আছে। তা হলো, নিয়তি তোমাকে বিমানবাহিনীর পাইলট হওয়ার জন্য তৈরি করেনি। তোমার ভাগ্যে নিশ্চয়ই অন্য কিছু হওয়া নির্ধারিত করে রাখা আছে। তুমি ওঠো। যাও। অনুসন্ধান করো যে নিয়তি তোমাকে কী হওয়ার জন্য বানিয়েছে। যাও। ওঠো। অনুসন্ধান করো।
এ পি জে আবদুল কালাম উঠলেন। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান পড়লেন। হলেন ভারতের সবচেয়ে নামি মহাকাশবিজ্ঞানীদের একজন। শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতিও (২০০২-২০০৭) হয়েছিলেন তিনি।
কাজেই আমাকে পাইলট হতেই হবে, আমাকে ডাক্তার হতেই হবে—এ ধরনের গোঁয়ার্তুমির কোনো মানে হয় না। কিন্তু বড় স্বপ্ন দেখো। তাতে কোনো ক্ষতি নেই।
তোমার যা ভালো লাগে, তা–ই করতে থাকো। তোমার ছবি আঁকতে ভালো লাগে, ছবি আঁকো। তোমার গান গাইতে ভালো লাগে, গান করো। তোমার গল্পের বই পড়তে ভালো লাগে, গল্পের বই পড়ো। তোমার লেখালেখি করতে ভালো লাগে, লেখো। তোমার গণিত করতে ভালো লাগে, গণিত করো। তোমার বেড়াতে যেতে ভালো লাগে, ঘুরে বেড়াও।
তোমার যা ভালো লাগে, তা–ই করবে, কিন্তু সেটা কোনো উদ্দেশ্য বা মতলব থেকে করার দরকার নেই। মানে তোমার ক্রিকেট খেলতে ভালো লাগে, কাজেই তোমাকে ক্রিকেটারই হতে হবে—এমন নয়। জীবনের শুরুতেই এত বেশি ক্যারিয়ারিস্ট হয়ো না। উপভোগ করো। এনজয়। খেলতে ভালো লাগে, খেলো। পড়তে ভালো লাগে, পড়ো। তোমার পাহাড়ে উঠতে ভালো লাগে, তাই তোমাকে পর্বতারোহীই হতে হবে, এ রকম আগেভাগে ভাবার দরকার নেই।
সাকিব আল হাসানের বাবা নিজেও খেলোয়াড় ছিলেন। তাঁরা ছেলেকে খেলাধুলায় উৎসাহই দিতেন। কিন্তু সাকিব বেশি বেশি ক্রিকেট খেলতেন। সারাক্ষণ ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকতেন। এই জন্য সাকিব আল হাসানের বাবা ছেলের ক্রিকেট ব্যাট কেটে ফেলেছিলেন। শোনা যায়, তিনি তিন-চারটা ক্রিকেট ব্যাট কেটে ফেলেছিলেন। আর সব মা–বাবার মতো নিশ্চয়ই সাকিব আল হাসানের বাবা-মা চেয়েছিলেন, ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হোক। কিন্তু ছেলে ক্রিকেট ভালোবাসে। সে মাগুরা থেকে নড়াইলে গিয়ে ক্রিকেট ক্যাম্পে যোগ দিল। সেখানে সে নির্বাচকদের নজরে পড়ে গেল। তাকে আনা হলো ঢাকার কাছে বিকেএসপিতে। বিকেএসপির হোস্টেলে থেকে সাকিব লেখাপড়া আর খেলাধুলা চালিয়ে যেতে লাগলেন। আমরা পেলাম পৃথিবীর এক নম্বর অলরাউন্ডারকে।
আমাদের ক্রিকেটার মোস্তাফিজ ছিলেন সাতক্ষীরা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে। তিনিও খুব ক্রিকেট খেলতেন। তাঁর বাবাও ছেলের জন্য তিনটা টিউটর রেখে দিয়েছিলেন। তবুও ছেলে শুধু ক্রিকেট খেলে। মোস্তাফিজের মেজ ভাই তখন তাঁকে মোটরসাইকেলের পেছনে করে সাতক্ষীরায় রোজ ৪০ কিলোমিটার নিয়ে যেতেন। সেখানে সুন্দরবন ক্রিকেট একাডেমিতে মোস্তাফিজ ক্রিকেট শিখতেন। এর মধ্য দিয়েই আমরা পেলাম ক্রিকেটার মোস্তাফিজকে।
শচীন টেন্ডুলকার যখন ছোট, তখন তাঁদের বাড়িতে মিটিং বসল। শচীনের বাবা ভালো কবি। তাঁদের মিটিংয়ের বিষয়, ছোট্ট শচীনকে কি ক্রিকেট শিখতে দূরে হোস্টেলে পাঠানো হবে? মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত হলো, হ্যাঁ, পাঠানো হবে। ছোট শচীন পরিবার ছেড়ে হোস্টেলে গিয়ে উঠলেন।
এই সব ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, যার যা ভালো লাগে, তাকে তা–ই করতে দেওয়া উচিত। আর এই ভালো লাগার পেছনে ছুটতে গেলে জীবনে কিছু ত্যাগও করতে হয়। কষ্টও স্বীকার করতে হয়।
এই গল্পটা অনেকবার বলেছি। আবারও বলি। পাওলো কোয়েলহোর লেখা আল কেমিস্ট বইয়ে গল্পটা আমি পেয়েছি।
এক ছেলেকে তার বাবা পাঠালেন পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির বাড়িতে উপদেশ নেওয়ার জন্য। ছেলেটা পাহাড় ডিঙিয়ে, মরুভূমি পাড়ি দিয়ে সেই জ্ঞানী ব্যক্তির প্রাসাদে গিয়ে হাজির হলো। জ্ঞানী ব্যক্তি তখন আরও কয়েকজন মানুষের সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন।
ছেলেটা বাবার দেওয়া চিঠি তুলে দিল জ্ঞানী ব্যক্তির হাতে—বলল, আমার বাবা আমাকে পাঠিয়েছেন উপদেশের জন্য। আপনি আমাকে উপদেশ দিন।
জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, তোমাকে আমি উপদেশ দেব। তার আগে তোমাকে একটা চামচ দিচ্ছি। এই চামচে তেল ভরে দিচ্ছি। তুমি পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখো। তবে শর্ত আছে—তোমার চামচ থেকে যেন তেল পড়ে না যায়। ছেলেটা পুরো বাড়ি ঘুরল। ফিরে এসে বলল, এবার আমাকে উপদেশ দিন।
জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, বলো তো পাশের ঘরে কী আছে?
আমি বলতে পারব না।
তার পাশের ঘরে?
বলতে পারব না।
কেন পারবে না?
কারণ আমি সারাক্ষণ চামচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, যেন চামচ থেকে তেল পড়ে না যায়। কাজেই আশপাশে কী আছে, সেদিকে আমি তাকাতে পারিনি।
জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, তুমি আবার যাও। তোমার হাতে চামচ থাকবে, চামচে তেলও থাকবে, সেই তেল তুমি ফেলতেও পারবে না; কিন্তু তোমাকে বলতে পারতে হবে, কোন ঘরে কী আছে!
ছেলেটা চামচ হাতে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখল। বলল, এবার আমি বলতে পারব কোন ঘরে কী আছে। পাশের ঘরে আছে সুন্দর সুন্দর ছবি, তার পাশের ঘরে আছে সুন্দর কার্পেট। আরেকটা ঘরে আছে ফুলগাছ।
জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, তোমার চামচের তেল কোথায়?
ছেলেটি তাকিয়ে দেখল, চামচ থেকে তেল পড়ে গেছে।
জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, এটাই তোমার প্রতি আমার উপদেশ। আমাদের চামচ থেকে তেল পড়তে পারবে না। কিন্তু আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে, তা দেখতে হবে। যা কিছু আনন্দের, উপভোগের, তাতে অংশ নিতে হবে, উপভোগ করতে হবে, উদ্যাপন করতে হবে। করতে হবে, কিন্তু চামচ থেকে যেন তেল পড়ে না যায়।
আমরাও আমাদের যা ভালো লাগে, তা করব। তাতে অংশ নেব। আমরা প্রচুর বই পড়ব, প্রচুর খেলব, প্রচুর বেড়াব, ছোটাছুটি করব। আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেব, গান করব, নাচ করব, আবৃত্তি করব, ক্লাব করব, বিজ্ঞান ক্লাব, ফটোগ্রাফি ক্লাব, বুক ক্লাব, অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব—সব। কিন্তু আমাদের পরীক্ষার পড়াও আমরা পড়ব। আমাদের ফল যেন বেশি খারাপ না হয়ে যায়।
আজকের যুগে পরীক্ষার ফল ভালো করার উপকারিতাই বেশি। আমরা সবাই জানি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রবলেম চাইল্ড। তাঁকে একটার পর একটা স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। কোনো স্কুলেই তাঁর মন বসত না। ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তাঁকে পাঠানো হলো ইংল্যান্ডে। সেখানেও তিনি ব্যারিস্টারি না পড়েই দেশে ফিরে আসেন। ছোটবেলায় আইনস্টাইনকেও মনে করা হতো বোকাসোকা একজন বালক। কিন্তু কথায় আছে, স্কুল পালালেই রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, আইনস্টাইন—এঁরা হলেন জিনিয়াস। অনন্যসাধারণ প্রতিভাবান। স্কুলের নিয়মকানুন, প্রথাসিদ্ধ শিক্ষা এঁদের মন ভরাতে পারত না। কিন্তু আজকের যুগে ভালো ফলের দরকার আছে। ধরা যাক, হুমায়ূন আহমেদের কথা। তিনি কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেকেন্ড স্ট্যান্ড করেছিলেন। মানে যত ছেলেমেয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে বোর্ডে তিনি দ্বিতীয় হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি প্রথম বিভাগে এমএসসি পাস করেন। পরে আমেরিকা থেকে পিএইচডি করে আসেন। ভালো ছাত্র, আবার ভালো লেখক।
এবার বলব একজন বিজ্ঞানীর কথা। তাঁর নাম এম জাহিদ হাসান। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষক। তিনি ভাইল ফারমিয়ন কণা আবিষ্কার করেছেন, যা বিজ্ঞানীরা ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খুঁজছিলেন। তিনি সেই গবেষণাগারে গবেষণা করেন, যেখানে আইনস্টাইন কাজ করতেন। এই এম জাহিদ হাসান ধানমন্ডি বয়েজ স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেকেন্ড স্ট্যান্ড করেন। আইএসসি পরীক্ষায় তিনি ফার্স্ট হন। তার মানে পরীক্ষায় ভালো ফল করলে পরবর্তী জীবনে অনেক সুবিধা হয়। আর ধরো, এই সমাজ এবং সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভালো বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজ্ঞ, কৃষিবিদ, দার্শনিক, গবেষক, চিন্তাবিদ, ভাবুক, অর্থনীতিবিদের দরকার আছে। ভালো ছাত্র না হলে আজকালকার দুনিয়ায় এ ধরনের গবেষণাকাজের সুযোগ পাওয়াও মুশকিল। কাজেই তুমি যদি ভালো ছাত্র হও, আমরা খুবই খুশি হব। তোমাকে আমরা উৎসাহিতও করব।
এখন এই হুমায়ূন আহমেদ আর জাহিদ হাসানের জীবনের আরেকটা দিক আমরা খেয়াল করব। দুজনেই ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সঙ্গে, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমরা হুমায়ূন আহমেদের জীবনী পড়ে জেনেছি, তাঁদের বাড়িতে একটা সাহিত্যিক পরিবেশ ছিল। হাতে লেখা পত্রিকা বের করা হতো। সাহিত্য পত্রিকা বের করা হতো। নাটক মঞ্চায়ন করা হতো।
আর আমার কাছে এম জাহিদ হাসানের একটা বই আছে। বইটার নাম এসো ধূমকেতুর রাজ্যে। জাহিদ হাসান যখন ঢাকায় থাকতেন, কিশোর ছিলেন, তখন থেকেই তিনি বিজ্ঞান পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। আবদুল্লাহ মুতী শরফুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করে তাঁর উৎসাহে বিজ্ঞান আন্দোলন করতেন।
তার মানে শুধু ভালো ছাত্র হলে হবে না। সাহিত্য–শিল্প–সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। প্রচুর বই পড়তে হবে।
আবার শুধু শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা করলে হবে না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটাও ভালোভাবে চালিয়ে যেতে হবে। পরীক্ষার ফলও ভালো করতে পারলে ভালো
বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী আছেন, তাঁর নাম ড. আতাউল করিম। আমেরিকায় তাঁর খুব নামডাক। তিনি গবেষণা করছেন একটা মজার বিষয় নিয়ে। রেলগাড়ি তো রেললাইনের ওপর দিয়ে যায়। তাঁর একটা গবেষণার বিষয় হলো, রেলগাড়ি যদি রেললাইন ঘেঁষে না গিয়ে একটু ওপর দিয়ে যায়, তাহলে অনেক দ্রুত যেতে পারবে। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস ডার্টমাউথে প্রভোস্ট এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে কাজ করছেন।
আতাউল করিম জন্মগ্রহণ করেছেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখার একটা গ্রামে। তিনি যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন, সেখানে কোনো বেঞ্চ ছিল না। তাঁদের মাটিতে মাদুরে বসে পড়াশোনা করতে হতো। কিন্তু তিনি প্রচুর বই পড়তেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে সারাক্ষণ বই ধার চাইতেন। শুধু তাঁর বই পড়ার আবদার মেটানোর জন্য ওই স্কুলে একটা লাইব্রেরি বানাতে হয়েছিল।
আর ছোটবেলা থেকেই তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করতে শুরু করেন। ১৯৭২ সালে আইএসসি পরীক্ষায় তিনি ফার্স্ট হয়েছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান সাময়িকী পত্রিকা এবং বাংলা একাডেমির বিজ্ঞান পত্রিকায় তাঁর ৩০টির বেশি লেখা প্রকাশিত হয়। তার মানেটা কী দাঁড়াল? ভবিষ্যতে যিনি একজন বড় পদার্থবিজ্ঞানী হবেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বই পড়তেন, তাঁর পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো ছিল এবং তিনি ছাত্র অবস্থাতেই প্রচুর লেখা লিখেছেন, সেগুলো পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে।
বিল গেটসের নাম তো আমরা সবাই জানি। তাঁর সম্পর্কে কিছু গল্প প্রচলিত আছে। একটা হলো, তিনি নাকি বলেছেন, ‘আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটা সাবজেক্টে ফেল করেছিলাম। আমার একজন বন্ধু সবগুলো সাবজেক্টে হাইয়েস্ট নম্বর পেয়েছিল।’
কিন্তু বিল গেটসের একটা উক্তির সত্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিল গেটস বলেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ছিল অনেক স্বপ্ন। আর সেই সব স্বপ্ন আমি পেয়েছিলাম সম্ভবত বই থেকে। ছোটবেলা থেকেই আমি প্রচুর বই পড়ি। তোমরা যদি আমার অফিসে যাও, দেখবে আমার সঙ্গে আছে বই। যদি আমার বাড়িতে যাও, দেখবে আমার সঙ্গে আছে বই। আমি যখন ট্রেনে চড়ি, আমার সঙ্গে থাকে বই। আমি যখন গাড়িতে চড়ি, আমার সঙ্গে থাকে বই। আমি যখন প্লেনে চড়ি, তখনো আমার সঙ্গে থাকে বই।’
বিল গেটস তাঁর পড়া প্রিয় বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেন নিয়মিত। তাঁর দেখা প্রিয় সিনেমার তালিকাও তিনি নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে থাকেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, পৃথিবীর পুস্তক সাধারণকে পাঠ্যপুস্তক ও অপাঠ্য পুস্তক, প্রধানত এই দুই ভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে। টেক্সট বুক কমিটি হইতে যে-সকল গ্রন্থ নির্বাচিত হয়, তাহাকে শেষোক্ত শ্রেণীতে গণ্য করিলে অন্যায় বিচার করা যায় না।
কাজেই প্রচুর বই পড়ো। বাইরের বই। আউট বই।
পরীক্ষার ফল ভালো করার উপায়টাও আমি তোমাদের শিখিয়ে দিতে পারি। সবচেয়ে সহজ উপায়টা হলো, জিনিসটা শিখে ফেলা। জিনিসটা কী, বুঝে ফেলা। তা করতে হলে বিষয়টা তোমার ভালো লাগতে হবে। ভালো লাগাও কিন্তু অনুশীলনের ব্যাপার। চর্চার ব্যাপার। মানে প্র্যাকটিসের ব্যাপার।
আমি যেদিন প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁয় খেতে গেলাম, খাবারটা আমার ভালো লাগেনি। কয়েকবার খাওয়ার পর চাইনিজ খাবার আমার প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছিল। আমি কিন্তু ছাত্রজীবনে ক্রিকেট খেলা অপছন্দ করতাম। সবাই যখন টেলিভিশনের সামনে ভিড় করে ক্রিকেট খেলা দেখত, আমার সেটা খুবই অপছন্দের ব্যাপার ছিল। তারপর বাংলাদেশ যখন ক্রিকেটে ভালো করতে লাগল, আমি আস্তে আস্তে ক্রিকেট খেলা দেখতে লাগলাম। এখন তো ক্রিকেট আমার খুবই প্রিয় একটা খেলা। পড়াশোনার ব্যাপারটাও তাই। প্রথম প্রথম কোনো একটা সাবজেক্ট ভালো না–ই লাগতে পারে। কিন্তু তুমি চেষ্টা করো, পড়ো, বোঝার চেষ্টা করো, আর অনুশীলন করো, দেখবে ওই বিষয়টাও তোমার ভালো লাগতে শুরু করেছে। আর তোমার যদি একবার ভালো লেগে যায়, তাহলে তুমি সেই সাবজেক্টে ভালো করবেই।
তারপরও পরীক্ষার ফল ভালো করার কতগুলো কায়দা আছে। একটা হলো, পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন আসে, আর সেটার উত্তর কীভাবে লিখতে হয়, এটা একটু গবেষণা করে বের করে ফেলা। সংক্ষিপ্ত উত্তর যেখানে চাইবে, সেখানে বড় করে লেখার দরকার নেই। আবার যেখানে একটু বড় উত্তর পরীক্ষক আশা করবেন, সেখানে সংক্ষেপে উত্তর দিলে চলবে না। কাজেই প্রশ্নপত্রে ওই উত্তরের জন্য কত নম্বর বরাদ্দ আছে, সেটা দেখে নেওয়া ভালো।
বাংলা আর ইংরেজিতে ভালো করার আরেকটা উপায় হলো, প্রচুর বই পড়া। বাংলা আর ইংরেজিতে প্রচুর বই পড়ো, পত্রিকা পড়ো। ইংরেজি লিসেনিং আর স্পিকিং ভালো করার জন্য প্রচুর ইংরেজি ছবি দেখতে পারো। এখন তো তোমাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। অনলাইনে পৃথিবীর সেরা সিনেমাগুলো দেখে ফেলো। আর ইংরেজি সাহিত্য বাংলা অনুবাদ না পড়ে ইংরেজি মূল বইটাই পড়ার চেষ্টা করে দেখতে পারো। ফেসবুকের স্ট্যাটাসগুলো ইংরেজিতে লেখো। সপ্তাহে অন্তত তিন ঘণ্টা ইংরেজি সাহিত্য থেকে পড়বে, তিন ঘণ্টা বাংলা সাহিত্য থেকে পড়বে। পাঠ্য বইয়ের কথা বলছি না। বলছি বাইরের বইয়ের কথা।
বাংলা আর ইংরেজিতে ভালো করার জন্য মূল বইয়ের মূল টেক্সট আগে বারবার করে পড়ে নিতে হবে। শুধু প্রশ্ন আর উত্তর শিখলে চলবে না। তারপর প্রশ্ন আর অনুশীলনী নিয়ে খাটতে হবে। কোন প্রশ্নের কী উত্তর হতে পারে, নিজের খাতায় সেটা লিখে ফেলো। তারপর কী লিখেছ, সেটা মনে রাখার চেষ্টা করো।
গণিতে ভালো করার জন্য প্রথমে যে পরামর্শটা আমি দেব, তা হলো, সরাসরি অনুশীলনীতে না গিয়ে আগে যে কথাগুলো লেখা আছে, সেগুলো পড়ো। পড়ে বোঝার চেষ্টা করো, জিনিসটা কী। তারপর সেখানে যে উদাহরণগুলো দেওয়া আছে, সেগুলো আগে চেষ্টা করো। সেগুলো সমাধান করো। এরপর অনুশীলনীতে যাও।
এরপরের পরামর্শটা হলো, চর্চা করো। অনুশীলন করো। গণিতে ভালো নম্বর পাওয়ার এক নম্বর উপায় হলো, প্র্যাকটিস করা। গণিত যত প্র্যাকটিস করবে, ততই তুমি পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে।
ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। শিক্ষকেরা যা বলেন, মন দিয়ে শুনতে হবে। আর যেদিনকার পড়া, সেদিনই পড়ে ফেলতে হবে। এটা যদি কেউ করে, তাহলে তার পরীক্ষার আগে রাত জেগে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না। হোমওয়ার্ক শিক্ষকেরা যা দেবেন, সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলা ভালো।
পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়তে নেই। পরীক্ষার দিন সকালেও পড়ার দরকার নেই। তোমার মনটা ভালো থাকতে হবে। শরীরটা ভালো থাকতে হবে। সে জন্য পরীক্ষার আগের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাবে। বেশি দুশ্চিন্তা করবে না। দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের পড়া কোনো কাজে আসে না; বরং ফুরফুরে মন নিয়ে পরীক্ষার হলে গেলে পরীক্ষা ভালো দেওয়া যায়।
তোমরা কি এফ আর খানের নাম শুনেছ? ফজলুর রহমান খান। তিনি পৃথিবীর সেরা প্রকৌশলীদের একজন। আমাদের দেশের মানুষ। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। আমি পরে যেখান থেকে পড়েছি, মানে বুয়েট থেকে। তখন তো আর বুয়েট ছিল না।
এফ আর খানকে বলা হয় স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন। এফ আর খান আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভবনটার নকশা করেছিলেন। এটার নাম আগে ছিল সিয়ার্স টাওয়ার। সেই ভবনটা আমি দেখতে গিয়েছিলাম শিকাগো শহরে। সেই ভবনের নিচের সড়কটার নাম এফ আর খান লেন। সেই লেনে এফ আর খানের একটা ধাতব আবক্ষ মূর্তি আছে। আর তার নিচে এফ আর খানের একটা উক্তি খোদিত আছে। এফ আর খান বলেছেন, ‘একজন প্রযুক্তিবিদের আপন প্রযুক্তিতে হারিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তাকে অবশ্যই জীবনকে উপভোগ করতে জানতে হবে। আর জীবন হলো শিল্প, নাটক, সঙ্গীত এবং সবচেয়ে বড় কথা, জীবন হলো মানুষ।’
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী বলছেন শিল্প, নাটক, সংগীতের চর্চা করতে হবে। বলছেন, মানুষের কথা ভাবতে হবে, মানুষকে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে জানতে হবে।
তোমরা যদি এফ আর খান লিখে গুগল করো, দেখবে, তাঁর একটা ছবি আছে। তিনি মেঝেতে বসে হারমোনিয়ম বাজাচ্ছেন। তিনি ভালো গান গাইতে পারতেন। রবীন্দ্রসংগীত তাঁর প্রিয় ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
আমার একজন প্রিয় শিক্ষক হলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি এখন জাতীয় অধ্যাপক। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক। জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার পড়েননি, এমন ভালো সাহিত্য কম আছে, দেখেননি এমন ভালো চলচ্চিত্র কম আছে। দেশ-বিদেশের সেরা বইগুলো তিনি পাঠ করেছেন, ভালো সিনেমাগুলো তিনি নিয়মিত দেখে থাকেন।
কাজেই যারা সফল ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী হতে চাও, তাদের অবশ্যই সাহিত্য পাঠ করতে হবে, শিল্পের চর্চা করতে হবে। সংগীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র—এই সব বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে, চর্চা করতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করতে হবে।
ডেভিড শেঙ্ক নামে একজন আমেরিকান লেখক আছেন। তাঁর বইয়ের নাম দ্য জিনিয়াস ইন অল অফ আস। পৃথিবীর বড় বড় প্রতিভাবানকে নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। তিনি বলছেন, আমাদের সবার জিনের মধ্যেই প্রতিভা আছে। আমরা সবাই আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, পেলে, ম্যারাডোনা, পাবলো পিকাসো, পাবলো নেরুদার মতো জিনিয়াস বা প্রতিভাবান। কিন্তু আমাদের জিনে থাকলে কী হবে! আমরা তো তাঁদের মতো সাধনা করিনি। সবার জিনের মধ্যেই প্রতিভা আছে, কিন্তু যাঁরা জিনিয়াস হিসেবে পৃথিবীতে গণ্য হয়েছেন, তাঁরা কী করেছেন? তাঁরা তাঁদের প্রিয় বিষয়টাকে বেছে নিয়েছেন, তারপর ওই বিষয়ে এত মন দিয়ে এমন গভীরভাবে সাধনা করেছেন যে তাঁদের ওই জিনটা প্রকাশিত হয়েছে। আর আমরা বাকিরা চেষ্টা করিনি। তাই আমাদের জিনের মধ্যে প্রতিভাটা প্রকাশিত হতে পারেনি। আমরাও যদি কোনো একটা বিষয়কে ভালোবাসি, তারপর গভীরভাবে চেষ্টা করি, অনেক সাধনা করি, অনেক কষ্ট করি, অনেক প্র্যাকটিস করি, তাহলে আমরাও জিনিয়াস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব।
কিন্তু যত চেষ্টাই করি না কেন, সবাই একটা ক্লাসে ফার্স্ট হবে না। ধরা যাক, আমরা সবাই দৌড়বিদ হওয়ার জন্য ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করতে লাগলাম। ভালো খাওয়া-দাওয়া, নিয়মিত ঘুম, আর প্র্যাকটিস। কোচ রেখে নিয়মিত দৌড়াই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা সবাই দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। একসঙ্গে দৌড়াতে শুরু করলে আমরা কেউ ফার্স্ট হব, কেউ লাস্ট হবই। এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই।
তেমনি ধরা যাক, বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজে এক বছরে ভর্তি হতে পারে দুই হাজার জন। এখন এক লাখ ছেলেমেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। যত চেষ্টাই করুক, ৯৮ হাজার মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবে না। এটা নিয়ে মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই।
সব সাবজেক্টই ভালো সাবজেক্ট, যদি তুমি ভালো করো। বাংলা ভালো বিষয়। আমাদের জাতীয় অধ্যাপক এবার হলেন তিনজন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আর অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। প্রথম দুজন বাংলার ছাত্র, শেষের জন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। এঁদের প্রত্যেককেই সফল বলতে হবে। শেখ হাসিনা বাংলার ছাত্রী ছিলেন।
তুমি যদি পালি নিয়ে পড়ো, ইসলামের ইতিহাস পড়ো, পার্সি পড়ো, তবুও তুমি ভালো করতে পারবে।
পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সঙ্গে পরবর্তী জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতার অনেক ক্ষেত্রেই কোনো সম্পর্ক নেই। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি একবার ভোটে নির্বাচন করেছিল বিবিসি রেডিও। তাতে এক নম্বর হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই নম্বর হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহিষ্কার করেছিল চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন সমর্থন করার অপরাধে। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো স্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি।
সব জীবনই সফল। ব্যর্থ জীবন বলতে আসলে কিছু নেই। এ পি জে আবদুল কালামকে যেমন সাধু বলেছিলেন, তোমার জীবনের নিয়তি তোমাকে পাইলট বানানোর জন্য বাছাই করেনি, তুমি অন্য কিছু হবে, তেমনি প্রত্যেকের জীবন তার তার মতো করেই সুন্দর। সবাইকে বিখ্যাত হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। সবাইকে এক নম্বর হতে হবে, এটাও খুব খারাপ কথা।
এই জন্য আমি বলব, বেশি করে খেলাধুলা করো। তাতে আমরা হারতে শিখব। পরাজয় মেনে নিতে শিখব।
আসল কথা হলো, মানুষের উপকারে আসা। মানুষের ক্ষতি না করা। মানুষের ক্ষতি না করে আনন্দপূর্ণ একটা জীবনযাপন করা। একটা ছোট্ট ঘাস হয়ে যে জন্মেছে, তার জীবনও সুন্দর। একটা গোলাপ ফুলের জীবনও সুন্দর। আবার একটা বটগাছের জীবনও সুন্দর।
তেমনি এই পৃথিবীতে কত মানুষ। একেকজন একেকটা কাজ করছে। প্রত্যেকের জীবনেরই একটা মানে আছে। প্রত্যেকের জীবনেই হাসি-কান্না-আনন্দ আছে।
আমাদের রংপুর জিলা স্কুলে আমাদের ক্লাসে পড়ত এক শ জন ছাত্র। আজ ৩৭ বছর পর দেখি, প্রায় এক শ জনই জীবনে ভালো করছে। যে ফার্স্ট হতো, সে–ও ভালো করছে, যে লাস্ট হতো, সে–ও ভালো করছে।
আমাদের বুয়েটের বন্ধুদের মধ্যে যে ছেলেটি সবচেয়ে ভালো করছে, সে বুয়েটে ছিল সবচেয়ে খারাপ ছাত্র।
সফল হওয়ার একটা উপায় হলো, সফল হওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা না করা। নিজের কাজটাকে উপভোগ করা। নিজের পরিবারকে সময় দেওয়া। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের কথা তোমাদের ওপরে বলেছি। এখানে তাঁর একটা উক্তি তুলে ধরছি:
‘যদি কেউ রাস্তার ঝাড়ুদার হন, তিনি এমন সুন্দরভাবে রাস্তা ঝাড়ু দেবেন যেন মাইকেল্যাঞ্জেলো ছবি আঁকছেন, বিটোফেন সুর সৃষ্টি করছেন, শেক্সপিয়ার কবিতা রচনা করছেন। তিনি এত সুন্দরভাবে রাস্তা ঝাড়ু দেবেন যে স্বর্গ আর মর্ত্য থেকে সব দেবদূত নেমে আসবে, একটুখানি থামবে আর বলবে, এখানে বাস করতেন এক রাস্তার ঝাড়ুদার, যিনি তাঁর কাজ করতেন খুব ভালোভাবে।’
সক্রেটিসকে প্লেটো জিজ্ঞেস করেছিলেন, সর্বোচ্চ দেশপ্রেম কী? সক্রেটিস জবাব দিয়েছিলেন, সবচেয়ে সুন্দরভাবে নিজের কাজটুকু করা। আমাদের মাশরাফি বিন মুর্তজাও একই কথা বলেন। বলেন, সবাই কেন শুধু ক্রিকেটের মধ্যে দেশপ্রেম খোঁজে? আসল দেশপ্রেমিক তো আমাদের কৃষকেরা, শ্রমিকেরা। আসল দেশপ্রেমিক তো আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
কোনো কাজ ছোট নয়। কোনো কাজ বড় নয়। ভালোভাবে নিজের কাজটুকু করাই আসল।
আরেকটা কথা বলি। এটা জীবনে সব সময় কাজে লাগবে। দেওয়ার বেলায় এগিয়ে থাকার চেষ্টা করবে। তোমার বন্ধু আর তুমি। তুমি তাকে যদি বেশি দিয়ে থাকো, তাহলে ভাববে তুমি জিতেছ। তেমনিভাবে একটা সংসারে স্বামী আর স্ত্রী দুজনই যদি ভাবেন, আমি বেশি দেব, বেশি দিলেই আমি জিততে পারব, তাহলে ওই সংসারটা সুখের হবে। তেমনি ভাবে একজন ক্রেতা আর একজন বিক্রেতা দুজনেই যদি ভাবেন, আমি দেব বেশি, তাহলে কিন্তু দুজনেই সুখী থাকবেন।
জীবনে খারাপ সময় আসে। আবার ভালো সময়ও আসে। রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটবর্তী হয়। খারাপ সময়ে ভেঙে পড়তে নেই।
আর যদি তোমার অভাব, দারিদ্র্য ইত্যাদি থেকে থাকে, তাহলে তো তোমার সামনে কেবল এগিয়ে যাওয়ারই সম্ভাবনা।
দরিদ্র অবস্থা থেকেই তো বেশির ভাগ সফল মানুষ উঠে এসেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতায় যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়িটি ছিল স্যাঁতসেঁতে, আর অন্ধকার। তিনি যে বারান্দায় শুতেন, সেখানে তাঁর পা মেলার মতো পরিসর ছিল না। তিনি পা ভাঁজ করে শুতেন। নিজেই রান্না করতেন, তাঁর পিতা আর গ্রামের বাড়ি থেকে আসা মানুষজন সেই খাবার খেতেন। একদিন খেতে বসে তিনি দেখেন, তরকারিতে একটা তেলাপোকা। এতগুলো লোকের খাবার নষ্ট করার মানে হয় না। ফেলে দেওয়ার মতো সামর্থ্যও তাঁদের ছিল না। ঈশ্বরচন্দ্র সেই তেলাপোকাটা হাতের মুঠোয় তুলে নিয়ে মুখে পুরে ফেললেন, যাতে অন্যরা কেউ দেখতে না পায়। এই তিনিই তো সংস্কৃতি কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন।
নৈতিক মূল্যবোধ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সততা সবচেয়ে ভালো উপায়। এটা কেবল কথার কথা নয়। তুমি যদি সৎ থাকো, তাহলে তুমি সুখী হবে। তুমি যদি সৎ জীবনযাপন করো, তুমি সাহসী হবে। এই জন্য সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতার শিক্ষাকে ধারণ কোরো। অসৎ মানুষের আপাত সাফল্যে বিভ্রান্ত হয়ো না।
এখন যদি তুমি পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাও, তারা কিন্তু তোমার পরীক্ষার ফল শুধু দেখবে না, তারা দেখবে, পড়ার বাইরে তুমি আর কী কী করেছ। তুমি খেলাধুলায় ভালো কিংবা তুমি বিতর্ক-বক্তৃতায় ভালো, তোমার লেখা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, এসব তোমার ভর্তির জন্য বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে। আর তুমি যদি সামাজিক কাজ করো, ধরো, তুমি পথশিশুদের লেখাপড়া করিয়েছ কিংবা বন্যার্তদের সেবা করেছ, সেসব কিন্তু খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
এখন এই সব কাজ কি তুমি শুধু ভালো কলেজে–বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে বলে করবে?
না। এই সব কাজ তোমাকে যোগ্য করে তুলবে। তোমার মধ্যে নেতৃত্বের গুণ তৈরি করবে। তোমার সামাজিক যোগাযোগের ক্ষমতা বাড়াবে।
তুমি অবশ্যই স্কুল–কলেজের বিতর্ক–বক্তৃতা, আবৃত্তিতে অংশ নেবে। তাতে তোমার মঞ্চভীতি দূর হবে। তুমি কথা বলতে শিখবে। এসব পরবর্তী জীবনে তোমার অনেক কাজে লাগবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছেলেবেলায় অভাবী মানুষকে অন্ন দান করেছিলেন। দাঙ্গার সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এসবই তাঁকে নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
বর্তমান যুগে কিন্তু টাকাপয়সা কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদকে প্রধান সম্পদ মনে করা হয় না। এখন এক নম্বর সম্পদ মনে করা হয় যোগাযোগকে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের একজন মানুষ সুবীর চৌধুরী এখন আমেরিকার প্রধান একজন কোয়ালিটি-গুরু। তাঁর বই লাখ কপি বিক্রি হয়। তিনি লেখেন ব্যবস্থাপনার ওপরে। ছোটবেলায় তিনি কবি শামসুর রাহমান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে চিঠি লিখতেন। তিনি বলেন, এই সব যোগাযোগ তাঁর জীবনে অনেক কাজে লেগেছে।
তোমরাও মানুষের সঙ্গে মিশবে। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। বড়দের সম্মান করবে। ছোটদের ভালোবাসবে। সবার সঙ্গে মধুর ব্যবহার করবে। শিক্ষকদের মান্য করবে। মা–বাবার কথা শুনবে। মা–বাবা সব সময়ই সন্তানদের ভালো চান। এই কথাটা মনে রাখবে।
প্রতিটা জীবনই সুন্দর। প্রতিটা জীবনই সফল। প্রত্যেকের জন্যই জীবন সোনার মেডেল রেখে দিয়েছে। আমাদের কাজ হলো, অন্যের ক্ষতি না করে জীবনটাকে যাপন করে যাওয়া। অন্যের সাফল্যে আমাকে খুশি হতে হবে। অন্যের আনন্দে আমাকে আনন্দিত হতে পারতে হবে।
আইনস্টাইন বলেছেন, জীবন হলো বাইসাইকেলের মতো, সব সময় চালাতে হয়, তা না হলে পড়ে যেতে হয়। আর আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন, জীবন সম্পর্কে আমার সমস্ত অভিজ্ঞতা আমি মাত্র তিনটা শব্দে লিখে দিতে পারি, ‘জীবন চলেই যায়।’
সব জীবনই সফল। সব জীবনই সুন্দর। তোমার মতো আর কেউ নেই। তোমার জীবনটাই সবচেয়ে সুন্দর। তোমার জীবনই সফল জীবন। এভাবে ভাবতে শেখো।
Credit- Prothom Alo
১। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠুন। ফলে আপনি অন্যদের চেয়ে বেশি... আরো পড়ুন
ছোটবেলা থেকে খুব দুরন্ত ছিলাম। একাধারে শুধু পড়াশোনা করব আর দুনিয়ার... আরো পড়ুন
উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন। পড়াশোনা... আরো পড়ুন
আপনি কি জানেন বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে স্টিফেন... আরো পড়ুন
“সায়েন্স নিউজ” নামের একটি গণ’মাধ্যমের বিচারে বাছাই করা ১০ বিজ্ঞানীর একজন... আরো পড়ুন
বার বার পরীক্ষা দিয়েও যাদের জব পেতে দেরী হচ্ছে তাদের জন্য:... আরো পড়ুন