ব্যাংক রিটেন প্রস্তুতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা ।
যেকোনো একটি প্রশ্ন হাতে নিলেই দেখতে পারবেন, মোট ২০০ মার্কের রিটেন এক্সাম হয়ে থাকে, যেখানে সময় বরাদ্দ থাকে ২ ঘন্টা। চিন্তা করলে মনে হবে অনেক সময়, কিন্তু লিখতে গেলে আসলেই সময় পাওয়া যায় না। তাই ব্যাংক রিটেন কে আমরা বলে থাকি, টাইম ম্যানেজম্যান্ট এর পরীক্ষা। কিভাবে এই পরীক্ষায় পাশ করা যায়, এই নিয়ে আমাদের আজকের এই আলোচনা। একটু খাতা কলম নিয়ে বসতে পারেন। আশা করি, একটা পূর্ণ গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করবো।
প্রথমেই বলি, রিটেনের কাট মার্ক নিয়ে। যেহেতু ভাইভাতে মাত্র ২৫ মার্ক, তাই বলা যায়, রিটেনে এগিয়ে থাকলে ভাইভাতে আপনি এমনিতেই এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু কত মার্ক পেলে আপনি নিরাপদ আছেন বলে ভাবতে পারেন। এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা খুব কঠিন। কারণটা নিচে ব্যাখা করছি।
এখানে ভাইভাতে আপনি ১৫-১৮ মার্ক পাবেন ধরে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
৮ ব্যাংকের গত বছরের এক্সামে পদ ছিল ১২২৯ টি। ১৩৫-১৪০ ছিল একেবারে নিরাপদ স্কোর। কারণ পদ অনেক।
কিন্তু রুপালী ব্যাংকের ২৮৩ পদের নিয়োগে ১৫০+ না পেলে কোনোভাবেই চান্স পায় নি কেউ কারণ এখানে আবার কোটা প্রয়োগ হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসারে অনেকে ৩০-৪০ মার্ক উত্তর না করেও ২ ম্যাথ দিয়ে রিটেনে টিকেছে।
বুঝতেই পারছেন যে এক্সামের কাট মার্ক ভিন্ন হয় নানা কারণে। যেমনঃ
১। প্রশ্নের ডিফিক্যাল্টি লেভেল।
২। পদের সংখ্যা।
৩। কী ধরনের ক্যান্ডিডেটগণ এক্সাম এ বসেছেন। যেমন রুপালীর ২৮৩ পদের পরীক্ষাতে সবাই একেবারে সিনিয়র ক্যান্ডিডেট ছিলো।
তবে মোটামুটি ৫০০ পদ এর যেকোনো এক্সামে ৭০% মার্ক খুব ভাল স্কোর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সামের ক্ষেত্রে ৬৫% মার্ক খুব ভাল একটা স্কোর।তবে এটা আমার অনুমান মাত্র।
এই বিষয়টি সেট করে এক্সাম হলে বসতে হবে।
এবার দেখা যাক, মার্ক তুলবেন কোন জায়গা থেকে। আর মার্ক ছাড়তে হবে কোন জায়গা থেকে। উপরের তিনটি এক্সামই আমি দিয়েছি, এবং চান্স পেয়েছি। তাই আমি আমার তিন ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে আমার স্ট্রাটেজী টা শেয়ার করছি।
প্রথমেই দেখুন, আমরা কোন জায়গাতে সবচেয়ে বড় ভুল করি।
১। আমরা প্যাসেজ এবং এপ্লিকেশন এ তেমন গুরুত্ব দেই না। তাই এখানে আমরা এভারেজ মানের লেখা লিখে ৫৫-৬০% মার্ক পেয়ে থাকি। কিন্তু ঠিক মতো লিখতে পারলে আপনি কমপক্ষে ৮০% মার্ক তুলতে পারবেন। যা আপনাকে সবার চাইতে কমপক্ষে ১০-১২ মার্ক এগিয়ে রাখবে আর এই জন্য আপনি একটা ম্যাথ যদি ভুল করেও বসেন, তাঁর জন্য একটা ব্যাক আপ পাবেন। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসারে অনেকেই ২/৩ ম্যাথ করে রিটেনে টিকেছে। তাই সবার আগে খুব ভাল ভাবে এই দুইটা বিষয় বুঝে নিতে হবে। বিশেষ করে এপ্লিকেশন টা খুব ভাল ভাবে বুঝে নিতে হবে। তবে এটা নিয়ে বিস্তারিত লিখার ইচ্ছে আছে। মতামত দেবেন।
২। এবার আসি, ফোকাস রাইটিং এর ক্ষেত্রে। সবাই বলেন দাদা, অনেক লিখি, কিন্তু মার্ক পাই না। সত্যি বলতে আমি এত বেশী লিখার পক্ষে না। কম লিখব কিন্তু একেবারে প্রফেশনাল ভাবে লিখব। যেন লেখা দেখেই লেখার মান বুঝতে পারে। এতে করে আপনি গতানুগতিক লিখা তে ৫৫% মার্ক পেলে প্রফেশনাল ভাবে কম লিখলেও ৬৫% মার্ক আশা করতে পারেন। যেমন নিচের লেখা দুইটি দেখুন।
ধরা যাক, আপনাকে বলা হয়েছে, আমাদের দেশের অর্থনীতি নিয়ে একটা বাক্য লিখতে। যদি আপনি নিচের মতো একটা বাক্য লিখে থাকেন, তবে এই বইটি আপনার জন্য।
“The economy of Bangladesh has been growing fast.”
এটা না লিখে যদি নিচের মতো করে লিখেন? তাহলে?
“The 39th largest economy, the economy of Bangladesh – classified among the Next Eleven emerging market middle income economies – has experienced a tremendous growth over the previous decade as investment opportunity along with infrastructure has been diversified.”
আশা করি আর বুজাতে হবে না।
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে। কমপক্ষে ২ পেজ লিখবেন প্রতিটা টপিকের উপর এবং লেখায় যেন প্রচুর ডাটা থাকে, যার জন্য কমপক্ষে আরো অর্ধেক পেজ রেফারেন্স দিতে হয়। দেখবেন আপনার লেখার মান এমনিতেই ভাল হয়েছে। আমি এই কাজটা করেছি উপরের সবগুলো এক্সামেই।
৩। অনুবাদের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। আমরা যে ভুলটা সবাই করি তাহলো গতানুগতিক ভাবে অনুবাদ করা। দয়া করে সবাই যেভাবে অনুবাদ করছে, সেভাবে অনুবাদ না, কিছুটা ভিন্নতা রেখে অনুবাদ করুন। যেমনঃ
“সম্প্রতি বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে।“ এটার অনুবাদ করতে গেলে সবার আগে মাথায় আসবেঃ recently Bangladesh has progressed a lot. তাইনা? কিন্তু একটু পত্রিকা পড়ার ভালো অভ্যাস থাকলে আপনি নিচের মতো অনুবাদ করতে পারবেন।
Bangldesh has made a significant headway recently. এই অনুবাদের অর্থগত ভাবের দিকেও বেশ কিছু পার্থক্য আছে।
তবে এই নিয়ে আমি ধাপে ধাপে বিস্তারিত লিখবো। তাই বার বার বলছি গতানুগতিক অনুবাদ থেকে বের হয়ে এসে একটু ভিন্নতার দিকে যান। একটা ভালো মার্ক এখানেও পাবেন।
৪। এবার আসি ম্যাথ নিয়ে। এখানে একটা মজার খেলা হবে। যদি আর্টস ফ্যকাল্টি , এফ বি এস বা আইবিএ প্রশ্ন করে, ম্যাথ খুব বেশী কঠিন দেবে না, কারণ তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চেয়ে থাকে যে খেলাটা হবে পুরো ২০০ মার্কের। তাই ম্যাথ সমাধানে খুব বেশী সমস্যার মুখোমুখি হবেন না। কিন্তু অনেক সময় একটা বড় বা বিশাল ক্যালকুলেশন এর ম্যাথ দিতে পারে, যা করতে গেলে পুরো এক্সাম টাই নষ্ট হবে। এই রকম ম্যাথ পেলে আগেই এড়িয়ে যাবেন। কেবল সময় পেলেই এই ধরনের ম্যাথ দেখবেন। যেমন ২০১৮ এর এডি এবং ২০২০ এর বাংলাদেশ ব্যাংক এর অফিসারের প্রশ্ন দেখলেই বুঝতে পারবেন। কিন্তু আহসানউল্লাহ প্রশ্ন করলে একটু বেশী জোর দিতে হবে ম্যাথে, কেননা তারা প্রায় ৭০ বা ৯০ মার্ক পর্যন্ত ম্যাথ দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সাজেশন হল ম্যাথ দেখেই বুঝতে হবে কোন ম্যাথ গুলো সবাই পারবে। সেগুলো কোনভাবেই না পারলে হবে না। ধরুন ৭ টি ম্যাথে ৫ টি ম্যাথ যদি সবাই পারে, তবে এই ৫ টি ম্যাথ আপনাকে পারতে হবেই কিন্তু বাকি ২ টি ম্যাথের মধ্যে কম পক্ষে ১ টা ম্যাথ পারলেই আপনি জিতে গিয়েছেন। কারণ পুরো এক্সাম টা এখানেই নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। তবে লেখার মান ভাল হবে ৫ ম্যাথ দিয়েও চাকুরি পাওয়া যাবে। আশা করি খেলাটা বুঝতে পেরেছেন।
তবে এই জন্য কি কি ধরনের ম্যাথ প্রাক্টিস করতে হবে এই নিয়ে পোস্ট দেব। আজকে কেবল এক্সাম স্ট্রাটেজির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলাম। এর সাথে কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন।
৯৫% ক্যান্ডিডেট এমনিতেই বাদ যাবে। মূল প্রতিযোগিতা হবে বাকি ৫% এর মধ্যে। তাই ক্যান্ডিডেট এর সংখ্যা দেখে ভয় পাবেন না।
যাই লিখছেন , কোনো ভাবেই বিতর্কিত কিছু লিখবেন না।
খাতায় খুব বেশী কাটাকাটি করবেন না।
কোনো এক্সট্রা পেজ দেয়া হবে না।
রাফ করলে তা উল্লেখ করে দেবেন।
যাই লিখছেন, দয়া করে এমন ভাবে লিখবেন যেন যিনি খাতা চেক করছেন তিনি বুঝতে পারেন।
আজকে এই পর্যন্তই। পরবর্তীতে প্রতিটি টপিক নিয়ে বিস্তারিত লিখবো।
Achilice Barnad
MBA(IBA,DU) & MBA(CU)
Officer General (Bangladesh Bank)
Senior officer (Janata Bank Ltd)
Senior officer (Rupali bank Ltd)