আজ শুক্রবার ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথম পছন্দ । এ জন্য তারা বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চেষ্টা করে থাকেন। তবে বিসিএস দিতে এসে প্রথমেই অধিকাংশ লোক যে ভুলটা করেন তা হচ্ছে ক্যাডার সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা না নেয়া। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলেন, কাজকে ভালোবেসে সে অনুযায়ী সৎভাবে কাজ সম্পাদন করলে তার সাফল্য নিশ্চিত। তাই চলুন আজ আমরা জেনে নেই ক্যাডার সম্পর্কে। যাতে যুতসই পছন্দক্রম তৈরি করে নিজের মনকে প্রস্তুত করা যায়। তবে এটা ঠিক চাকরিতে ঢোকার আগে একটা ক্যাডার সম্বন্ধে শতভাগ জানা সম্ভব নয়।
এডমিন:
বলা হয়, ৯০% সচিব হয়ে থাকেন এডমিন থেকে হয়। শুধু পররাষ্ট্র সচিব ছাড়া সকল সচিবই এডমিন থেকে নিয়োগের ইতিহাস আছে। বর্তমানে কয়েকজন মাত্র সচিব অন্য ক্যাডারের। তাই যারা ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে চান তাদের জন্য এডমিনই ভাল চয়েস।
প্রথমে একটি ডিসি অফিসে কাজ করতে হবে সহকারী কমিশনার হিসেবে। ২/৩ বছর সময়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড এর দায়িত্ব পাবেন। এরপর ইউএনও, এডিসিডিসি। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়েও সহকারী সচিব, উপসচিব হিসেবে অনেকে কর্মরত থাকেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টিং হয়। তাই এডভেঞ্চার আছে, এটা এনজয় করতে পারলে ভাল লাগবে। মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ। তাই যদি আপনার ইচ্ছা থাকে, মানুষের জন্য কাজ করবেন সে সুযোগ এখানে আছে।
প্রচুর স্কলারশিপ থাকায় এদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি, উচ্চ শিক্ষা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাতে প্রেষণে (ডেপুটেশনে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, জাতিসঙ্ঘ, ইউনেস্কো,এডিবি ইত্যাদিতে) যাওয়ার সুযোগ অন্য সব ক্যাডারের চাইতে অনেক অনেক বেশি, উল্লেখ্য ডেপুটেশনে অনেক উচ্চ বেতন দেয়া হয় (যেমন জাতিসংঘে প্রারম্ভিক P-5 গ্রেড ইকুইভ্যালেন্ট প্রায় ১ লাখ ডলার)।
এই ক্যাডারে কাজের চাপ ভালই, তবে দায়িত্ব অনুসারে কাজের চাপ নির্ভর করে। রাজনৈতিক চাপ অনেক বেশি, তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেক সময় অনেক কাজ করা লাগতে পারে।
এই ক্যাডারে যারা সাধারণত বেশি দিন চাকরি করতে পারে (যেমন প্রথম দিকে যারা বিসিএস দিচ্ছেন) তারাই বেশি লাভবান হন। কারণ তাদের উচ্চ পদে (সচিব বা তদূর্ধ্ব ) যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদিও প্রমোশন আরো অনেকগুলো প্যারামিটারের উপর নির্ভর করে।
পররাষ্ট্র:
এই ক্যাডারে সাধারণত খুব কম খালি পোস্ট থাকে তাই প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি। জয়েন করার পর থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং, বিদেশে পোস্টিং হতে অন্তত ৬-৭ বছর বা কাছাকাছি লাগে, বিদেশে পোস্টিং হলে কূটনৈতিক সুবিধাসমূহ পাওয়া যায়। উচ্চ পদে গেলে এলিট জীবন যাপন করা যায়। বিদেশে পরিবার নেয়া যায়। পরিবার সদস্যরা কূটনীতিক না হয়েও কূটনীতিকের মত মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করেন। বিদেশে ট্যুর আছে প্রচুর।
তবে এখানে কাজের চাপ তুলনামূলক বেশি। রাষ্ট্রদূত হয়ে কোনো দেশে জয়েন করলে এরা ‘গার্ড অব অনার’ পান যা সাধারণত প্রেসিডেন্ট/ সরকার প্রধানরা পেয়ে থাকেন।
পুলিশ:
পুলিশকে সবার প্রয়োজন। তাই সরকারি চাকরি করে পরিচিতজনের কাছে কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার সৌভাগ্য এখন পুলিশেরই বেশি। কাউকে সরাসরি বিপদ থেকে রক্ষা বা আইনি সহায়তা তাদের হাতে। তাই যারা মানুষকে সরাসরি সাহায্য করতে চান, তাদের জন্য পুলিশ হওয়া সবচেয়ে উপযোগী। তবে এতে ঝুঁকির কথাও মাথায় রাখতে হবে।
ট্রেনিং শেষে পোস্টিং হলে এএসপিকেসরকারী গাড়ি দেয়া হয় দায়িত্ব পালনের জন্য, যেটা আর মাত্র দু-একটা ক্যাডারে আছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ অফিসারদের অনেকেই সুযোগ পায়। এতে বেশ ভাল আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়, সাথে একটু ঝুঁকি তো আছেই। আবার উপরের লেভেলে পোস্ট কম। তাই উপরে পদোন্নতি একটু স্লো, তবে আমাদের দেশে এসপিই অনেক বড় কিছু। তার উপরেরগুলোতো আছেই।
লজিস্টিক সাপোর্ট বেশ ভাল (যেমন রেশন সুবিধা, গাড়ি সুবিধা , কোয়ার্টার সুবিধা)। কাজের চাপ সবচাইতে বেশি, ঈদের দিনও ডিউটি থাকে।
কাস্টমস:
কাস্টমস ক্যাডাররা অর্থ মন্ত্রণালয়ের IRD এর একটি ডিভিশন NBR এর একটি উইং (কাস্টমস উইং) এর হয়ে কাজ করেন। এই ক্যাডারদের অ্যাডমিন/পুলিশদের মত পাওয়ার প্র্যাকটিসের সুযোগও একেবারে কম।
বৈধ উপায়ে প্রচুর টাকা কামানোর সুযোগ রয়েছে। যেমন, চোরাচালান ও ফাঁকি ধরতে পারলে সরকারিভাবে মূল্যভেদে ১০-৪০% পর্যন্ত পুরস্কার বা Grant of Rewards দেয়া হয়। লজিস্টিক সাপোর্ট বেশ ভাল, যেমন গাড়ি ও বাসস্থান সুবিধা।
পোর্টে কাজের চাপ অনেক বেশি। তবে VAT এ তুলনামূলক কাজের চাপ কম। মানসিক চাপও অনেক বেশি থাকে। ঢাকার বাইরে পোস্টিং বেশি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ক্যাডারের বস (NBR এর চেয়ারম্যান) আসে সাধারণত অ্যাডমিন ক্যাডার থেকে। তবে এই ডিপার্টমেন্টে ইন্টারনাল পলিটিক্সের কথাও শোনা যায়, তাই সততার বিকল্প নাই। আর যাদের শুধু টাকায় মন ভরে না, পাওয়ার প্র্যাকটিসেরও প্রবল ইচ্ছা আছে, তাদের এই ক্যাডারে না আসাই ভাল।
ইকনমিক:
সচিবালয়ে বা পরিকল্পনা কমিশনে অফিস। তাই ঢাকায় পোস্টিং। ইকোনোমিক ক্যাডারের অফিসারগণ প্লানিংয়ের কাজ করেন। তাই যারা রিসার্চ রিলেটেড কাজে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এটা ভাল চয়েস। তবে উপরের দিকে পদন্নোতির সুযোগ একটু কম।
(অডিট) নিরীক্ষা ও হিসাব:
সরকারি যত হিসাব-নিকাশ ও তদারকির কাজ আছে তা পালন করে থাকেন এই ক্যাডাররা।Tax Payers Money ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের Accountibility এবং Transparency নিশ্চিত করেন এই ক্যাডাররা।
এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ CAG একটি সাংবিধানিক পদ। অন্য সব ক্যাডাররাই এই ক্যাডারকে সমীহ করে থাকেন, কারণ অডিট/হিসাব সব প্রতিষ্ঠানেই হয়ে থাকে। অন্য প্রতিষ্ঠানের ভুল-ত্রুটি ধরাই এদের কাজ। এছাড়াও অন্য ক্যাডারদের বেতন/পেনশনের জন্যও তারা অডিট ক্যাডারদের সমীহ করে থাকে।
কাজের চাপ মোটামুটি ভালো। প্রমোশন গ্রোথ ভাল। কোয়ার্টার ও পরিবহন সুবিধা ভাল; উচ্চ পদে গেলে এ সুবিধা অনেক বেশি ভাল। ট্রেনিং ও ট্যুর আছে। সাধারণত ডিভিশনাল শহর গুলোতে পোস্টিং। তবে ঢাকায় পোস্টিং বেশি।
অভিমত:
চাকরি এনজয় না করতে পারলে ক্যারিয়ারকে ভালবাসতে পারবেন না। এতে সাফল্যও আসবে না। তাই কাজে আনন্দ থাকতে হবে। পরামর্শ হলো, যেই চাকরি হলে আপনি অবশ্যই করবেন, শুধু সেগুলোই চয়েস দিন। এক্ষেত্রে ২টা ইস্যু আছে।
(১) যারা বিসিএসে যেকোনো ক্যাডার হলেই চাকরি করবেন, তারা সার্কুলার দেখে যেগুলোতে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন, সবগুলো চয়েস দিয়ে দিন। (২) আর যারা মনে করেন– কয়েকটা ক্যাডার না হলে আসলেই চাকরি করবেন না, তারা অন্য ক্যাডার চয়েস দিয়েন না। কারণ চাকরি হলো, আর আপনি জয়েন করলেন না, বা কিছুদিন পরে ছেড়ে দিলেন, সেটা সবার জন্য খারাপ।
ক্যাডার নিয়ে আরো ভালো জানতে বা পরামর্শ পেতে পরিচিত কোনো বিসিএস ক্যাডারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এখানে শুধু হালকা ধারণা দেয়া হয়েছে।
মনে রাখবেন, বিসিএস একটা দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা। সার্কুলার থেকে প্রিলি, রিটেন, ভাইভা, নিয়োগ পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক টেনশন, হতাশা আসবে। কিন্তু ধৈর্য ধরতে হবে। স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে প্রতিজ্ঞা করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে নিজেকে। আপনিও পারবেন। কারণ কে না চায় সুখী হতে। তাই চেষ্টা চালিয়ে যান। সাফল্য আপনার হাতেই ধরা দেবে।
JOIN NSI JOB GROUP
https://www.facebook.com/groups/2368184410108567
প্রাইমারির নিয়োগ পরীক্ষর ফ্রি সাজেশন পেতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
https://www.facebook.com/groups/780572335479000/
NTRCA ১৭তম নিবন্ধন প্রিলির সাজেশন
স্বাগতা ভট্টাচার্য্য; ৩৪তম বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ ক্যাডারে আছেন। বাবা সব্যসাচী ভট্টাচার্য্য,... আরো পড়ুন
ফাতিমা আলম মেঘলা। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ওই ছাত্রী... আরো পড়ুন
বিসিএসের কোন ক্যাডারকেই নিরঙ্কুশভাবে ভাল কিংবা মন্দ বলা যাবে না।... আরো পড়ুন
ইট পাথরের নগরী ঢাকা শহরেই জন্ম ও বেড়ে উঠা। বাবা ডা.... আরো পড়ুন
প্রিয় বিসিএস পরীক্ষার্থী আজ আমি তোমাদের সাথে বিসিএস সিলেবাস এর মধ্যে... আরো পড়ুন
কম সময়ে কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়, এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ তুলে... আরো পড়ুন