আজ বুধবার ২০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ফাতিমা আলম মেঘলা। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ওই ছাত্রী শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। বিসিএস ক্যাডারের পেছনে না ছুটে বিশ্ববিদ্যালয়েই আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর হয়েছেন তিনি। কারণ তিনি মনে করেন শিক্ষকরাই হাজার হাজার ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডারের জন্ম দেয়ার কাজ করেন
মেঘলা বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর ইন্সটিটিউট PISER এর অডিওলোজি এন্ড স্পিচ ল্যাংগুয়েজ প্যাথোলোজি বিভাগের লেকচারার পদে রয়েছেন। এর আগে তিনি রণদা প্রসাদ সাহা ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগের লেকচারার ছিলেন। ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর। ক্যারিয়ার গঠন ও সফলতা নিয়ে ক্যাম্পাসলাইভের সঙ্গে কথা বলেছেন মেঘলা।মেঘলা জানালেন, নারায়ণগঞ্জের মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নারায়ণগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন।
তিনি তার ব্যাচে ২য় স্থান অর্জন করেছেন। পেয়েছেন ডিনস এওয়ারর্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ থেকে স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজি বিষয়ে আরেকটি প্রফেশনাল মাস্টার্স করেছেন। একই বিভাগে এমফিল করছেন তিনি।ছোটবেলা থেকেই মেঘলা স্বপ্ন দেখতেন স্বাবলম্বী হওয়ার। তিনি বলেন, বাঙালি মেয়েরা পরনির্ভরশীল মন মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। আমি ছোটবেলা থেকেই আত্মনির্ভরশীলতায় বিশ্বাসী। শিক্ষকতা আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় কাজ।
কারণ একজন শিক্ষকই হাজার হাজার ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডারের জন্ম দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকেন। আর শিক্ষকতায় নিজের কাজ করার স্বাধীনতাটা খুব বেশি। আমি শিক্ষকতাকেই পছন্দ করি।মেঘলা বলেন, ক্যারিয়ার গঠনে একেবারেই কোনো গোল সেট করে এগোয়নি। আমি কেবলই আত্মনির্ভরশীলতার পথে হেঁটেছি। নিয়মিত ক্লাস করেছি। প্রচুর জ্যাম, হরতাল, সবকিছুর মাঝেও আমি কখনো আমার ক্লাস মিস করিনি। আমার কথা হলো- “সফলতার পেছনে দৌড়িও না, তুমি তোমার বর্তমান দায়িত্ব পালন করো, ভবিষ্যৎ সাফল্য এমনিতেই তোমার কাছে ধরা দেবে।” তিনি মনে করেন, ক্যারিয়ার গঠনে পড়ালেখা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার ক্যারিয়ার যা নিয়েই হোক না কেনো, লেখাপড়ার উর্ধ্বে কিছুই নেই। ছাত্রজীবনের মূল কাজই লেখাপড়া করা। ভালোমতো মন দিয়ে পড়লে, ফলাফল এমনিতেই ভালো হবে। যেকোনো ক্যারিয়ারের জন্য ভালো ফলাফল একটা অন্যতম ক্রাইটেরিয়া বলে মনে করেন মেঘলা। শিক্ষকতার জন্য তো অবশ্যই!
তবে মেঘলা মনে করেন ভালো ছাত্র, সে কেবল লেখাপড়াতেই মগ্ন থাকে না। একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি আরো কিছু চর্চা করতে হয়, যা মনন বিকাশে সহায়তা করতে পারে। যেমন ধরুন, গান, নাচ, কবিতা, অভিনয়, খেলাধুলা, বিতর্ক ইত্যাদি। এসব অতিরিক্ত কার্যাবলিগুলো নামে অতিরিক্ত হলেও, মানুষের মনন বিকাশে কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করে৷ আপনি মনের দিক থেকে সতেজ ও ফুরফুরে থাকলে লেখাপড়ার প্রতি আপনার মনোযোগ বাড়বে।
তখন সব মিলিয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে, যা কিনা আপনাকে একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে গড়তে সাহায্য করবে।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় মেঘলা নারায়নগঞ্জস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আনন্দ’ নামক একটি সংগঠনের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আনন্দ কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ওই সংগঠনের সকল অনুষ্ঠানে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।
এছাড়াও মেঘলা তার বিভাগের সংস্কৃতি সংগঠনের সদস্য ছিলেন। বিভাগকে কেন্দ্র করে সকল অনুষ্ঠানেই তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। বিশেষভাবে নাচ, গান এবং অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন মেঘলা। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব সেমিনারে অংশ নিয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ড তার মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। তাকে মিলেমিশে একত্রে কাজ করার মানসিক শক্তি জুগিয়েছে, হাসিমুখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো শক্তি জুগিয়েছে এবং মাল্টিটাস্কিং যোগ্যতা তৈরিতে সহায়তা করেছে।
মেঘলা বলেন, আমি প্রথম কাজ যেটা খুব ভালোমতো করতাম সেটা হলো নিয়মিত ক্লাস করা। আপনি যতই ইন্টারনেট ঘাটেন না কেন আর যতই বই পড়েন না কেন, সরাসরি শিক্ষকদের মুখের কথা থেকে যা জানা যায়, যা শেখা যায় তা কোনো বই বা ওয়েবসাইট থেকে জানা বা শেখা যায় না। তাই সবার আগে প্রয়োজন নিয়মিত ক্লাস করা। এরপর প্র
য়োজন গ্রুপ ডিসকাশন।
মেঘলা তার বন্ধুদের সাথে আলোচনাভিত্তিক পড়াশোনা করতেন। বাসা দূরে থাকায় সরাসরি বন্ধুদের সাথে বসে গ্রুপ স্টাডি করতে পারতেন না। তবে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল কনফারেন্সে পড়ালেখার স্পেসিফিক টপিক নিয়ে কথা বলতেন তিনি। এভাবে গ্রুপ কলে কথা বলে সবার মতামত নিয়ে একটা টপিকের উপর অনেক ভালো ভালো তথ্য সংগ্রহ করতেন মেঘলা।মেঘলা বলেন, ক্লাসের পড়া প্রতিদিন বাসায় গিয়ে পড়ার সুযোগ হতো না। ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জ আসার ফ্লাইওভার তখন ছিল না।
যাওয়া আসায় প্রায় ৬ ঘন্টা সময় লাগতো। ক্লাসেই মনোযোগী থাকতাম অনেক। আর ছাত্রজীবনে এ অভ্যাসটা অনেক বেশি দরকার। শিক্ষকের কথাগুলো লেকচার খাতায় লেখার সময় একটু কিছুও মিস করতাম না। এজন্য পরীক্ষার আগের রাতে সেই লেকচার খাতাগুলো বেশ উপকারে আসতো। আর বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি হতো ফোন কনফারেন্সে। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় লাইফটাও পুরোপুরি এনজয় করেছেন তিনি। প্রতিদিনের ক্লাস ঠিক রেখে মেঘলা প্রচুর আড্ডা দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রচুর ঘুরাঘুরি করেছেন তিনি
মেঘলা জানালেন, নিয়মিত ক্লাস করার অনেক মজা আছে। ভালো ফলাফলের পাশাপাশি আরো অনেক কিছুই পাওয়া যায়। স্নাতক পরীক্ষার ফলাফলের জন্য ডিনস এওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও নিয়মিত ক্লাস, সদাচরণ এসবের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্কলারশিপও পেয়েছেন তিনি।শিক্ষকতাকে বেশ এনজয় করছেন জানিয়ে মেঘলা বলেন, আমি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি কখনো। আমার বিসিএসের পরীক্ষা পদ্ধতিটি পছন্দ নয়।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। স্বপ্নের মতো সেখানেই এসে পৌঁছেছি। আমি বাংলাদেশের স্বনামধন্য কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠান রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের লেকচারার পদে শিক্ষকতা করেছি। সহকারি প্রক্টরেরও দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়াও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম আমি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর প্রয়াস ইন্সটিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (পাইজার) এর অডিওলোজি এন্ড স্পিচ ল্যাংগুয়েজ প্যাথোলজি বিভাগে লেকচারার হিসেবে কাজ শুরু করেছি। শিক্ষকতা আমার শখ, আমার নেশা। আমি খুব আনন্দের সাথে এ পেশাটি উপভোগ করছি।
মেঘলা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার অনেক সুবিধা। নানা এলাকার নানা প্রতিভার শিক্ষার্থীদের চেনা যায়, জানা যায়, তাদের স্বপ্নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা খুবই আনন্দের বিষয় বলে মনে করেন মেঘলা। যারা একবার এ নেশায় জড়িয়ে যায়, তারা আর অন্য কোনো পেশায় যেতে পারেন না। এতো এতো ছাত্রের স্বপ্নগুলো জানা, তাদের স্বপ্ন পূরণে তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নেয়া, তাদের স্বপ্নের প্রাথমিক বীজ রোপন করা এসব যে কত আনন্দের তা কথায় বোঝানো বেশ মুশকিল।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হলেন ভালো ছাত্র ও ভালো মানুষ গড়ার কারিগর। দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য একজন ভালো শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমি চেষ্টা করছি নিজেকে একজন ভালো শিক্ষক রূপে প্রতিষ্ঠিত করার। আমার শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং পিতামাতার বিশ্বাস আমাকে এ কাজে অনেক সাহায্য করছে।মেঘলা বলেন, সফল ক্যারিয়ার গঠনে নিজেকে আগে উন্নত করতে হবে। নিজেকে আগে তৈরি করতে হবে সব জায়গায় নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য। ফোকাসড থাকতে হবে। নিজেকে মেলে ধরার যোগ্যতা থাকতে হবে। একজন ভালো শিক্ষার্থীর পক্ষেই এটা সম্ভব বলে মনে করেন মেঘলা।
শেয়ার করে রাখুন । চাকরির ফ্রি সাজেশন পেতে এই লিঙ্কটি ভিজিট করুন
এমন একটা সময় ছিল যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়েও এদেশের তরুণরা... আরো পড়ুন
সরকারি কর্ম কমিশন (PSC) বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় বেশ কিছু পরিবর্তনের আভাস... আরো পড়ুন
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়েছেন ১২ বছর। বরাবরই ভালো ফলাফলের... আরো পড়ুন
স্বাগতা ভট্টাচার্য্য; ৩৪তম বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ ক্যাডারে আছেন। বাবা সব্যসাচী ভট্টাচার্য্য,... আরো পড়ুন
ছোট থেকে চাকরি করার তেমন ইচ্ছে ছিল না তার। বড় হয়ে... আরো পড়ুন
কম সময়ে কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়, এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ তুলে... আরো পড়ুন